কাক ২

এলিফ্যান্ট রোডে কাজ করার সময় টয়লেটে ঢুকলে মানিব্যাগ বেসিনে রেখে টয়লেট করতাম। একদিন টয়লেট শেষে মানিব্যাগ না নিয়েই বের হয়ে এসেছিলাম। পরে যে টয়লেটে ঢুকেছিলে সে মানিব্যাগ পেয়ে আমাকে খুঁজে ফেরত দিয়েছিলেন।

‘কাকে’ এই ধরনের মানে জিনিশপত্র হারানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটতো। শুধু আমার না, সেখানে যাঁরা আসতো সবারই এই ধরনের ভুল হইত। এই ঘটনা বেশি ঘটতো মোবাইল নিয়ে। দেখা গেল এক রুমে মোবাইল রেখে অন্য রুমে চলে গেছে। কিন্তু কেউ হাত দিত না। বরং প্রকৃত মালিককে খুঁজে সেটা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করা হত।

তবে তবে মাঝে অন্য রকম ঘটনাও ঘটতো। যেমন কাকে প্রায়ই বিভিন্ন নাটকের স্যুটিং হতো। তখন জাফর চাচা আমাকে প্রথম দিনেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। অফিসের রান্নাঘর তালা মেরে রাখতে হবে। কারণ স্যুটিং ইউনিটের প্রডাকশন বয়রা নাকি থালাবাটি নষ্ট করে ফেলে। হয়তো কাঁচের গ্লাস অথবা প্লেট নষ্ট করে ফেলে। অথবা ওরা চলে গেলে অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই জাফর চাচা সব সময় স্যুটিং হলেই বিশাল একটা তালা মেরে রাখতো রান্না ঘরে।

কাকের সব কিছু খোলা রেখে দিলেও কোন কিছু হারাতো না। তবে একটা জিনিশ সবসময় তালা মেরে রাখতে হতো। সেটা হইল বইয়ের সেলফ। বইয়ের সেলফ খোলা রাখলে বই হারানোর সম্ভাবনা ছিল অনেক। তাই কখনো বইয়ের সেলফগুলা খোলা রাখা হতো না। কারো কোন বই লাগলে আমার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হতো। এমনও ঘটনা ঘটেছে একজন আরেকজনের কাছ থেকে বই ধার নিয়েছে কিন্তু ফেরত দেয় নাই। এটা নিয়ে দুইজনের সম্পর্কও নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেয় নাই এটা নিয়ে কখনো সম্পর্ক নষ্ট হয় নাই।

একবার আহমদ ছফার আট খণ্ডের এক খণ্ড বই চুরি হয়ে গেল। বহু খোঁজাখুঁজি করেও বইটা পাওয়া গেল না। এটা নিয়ে অফিসে এলাহি ঘটনা ঘটে গেল। সলিমুল্লাহ স্যার তো প্রতিদিন এসে খোঁজ নেন বই গেল কই? একটা বই ঠিকমতো রাখতে পারি না। সারাদিন অফিসে কি করি নানা কথাবার্তা।

প্রায় সপ্তাহখানেক পরে শওকাত ভাই সেই বই উদ্ধার করে নিয়ে আসলেন। বইটা কেউ একজন নিয়ে গিয়েছিলো। শওকত ভাই তাঁর বাসায় কোন কাজে অথবা এমনি বেড়াতে গিয়েছিলেন সেখানে দেখে ফেরত এনেছেন। পাশাপাশি যে বই নিয়েছেন সে অনুরোধ করেছেন তাঁর নামটা যেন না বলেন। শওকত ভাইও আর তাঁর নাম বলেন নাই। স্যারও আর কোন ঝামেলা করেন নাই বই পেয়ে। যেহেতু বই ফেরত দিয়েছেন তাই মাফ করে দিয়েছেন।

এর পরে আমাকে বিশেষভাবে বলে দেয়া হয়েছিল বই যেন না হারায়। পাশাপাশি স্যার মজা করে একটা কথা বলেছিলেন। আহমদ ছফার বই চুরি যাওয়াটা আহমদ ছফার জন্য সুখের হলেও আমাদের জন্য সুখের না।

.

৯ শ্রাবণ ১৪২৪

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.