আমার সাইকেল কেনা হয়েছিল মূলত একটা ধান্দা থেকে। সেই ধান্দাটা ছিল টাকা বাঁচানো, ট্রাফিক জ্যাম, সময় বাঁচানো এইসব কোন বিষয়ই মাথায় ছিল না। কারণ ঐ সময় বাঁচালে কোন পয়সা আসতো না। সময় বাঁচালে বরং অফিসের লাভ হইত, অফিস থেকে নতুন কাজ চাপাইয়া দিত। কিন্তু সাইকেলের কারণে আমি কিছু টাকা-পয়সা বাঁচাইতে পারতাম যা আমার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল।
পরবর্তীতে সাইক্লিংয়ে ঘুরাঘুরি শুরু। সেটারও প্রথম দিককার একটা ধান্দা ছিল। সেই ধান্দাটা অনেক অহমিকা টাইপের ধান্দা। যেমন, আমি তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ঘুরছি, ……. কিলোমিটার চালাইছি, …… দিন লাগছে।
তেঁতুলিয়া টেকনাফ সাইক্লিং ভ্রমণের সময় এই বিষয়গুলা আস্তে আস্তে উপলব্ধি করা শুরু করলাম। আগে যেসব ছোট ছোট বিষয় নিয়া খুব প্রাউড ফিল করতাম আসলে এইসব বিষয় নিয়া প্রাউড ফিল করার কিছু নাই। এইগুলা মানুষ অনেক আগে থেকেই করে আসতেছে এবং আরো অনেক বড় বড় কাজ করে আসতেছে। আমি যখন তেঁতুলিয়া টেকনাফ সাইক্লিং করি তখন মনা ভাই আরো দশ বছর আগেই এই কাজ করে ফেলছে। উজ্জ্বল ভাই নামে একজন আছে উনার বয়স যখন ২৫ তখন তিনি ২৫+ দেশ ঘুরে ফেলছেন সাইকেল নিয়ে। রামনাথ বিশ্বাস নামে এক লোক ১৯৩১ সালের দিকেই বিশ্বভ্রমণে বের হয়ে গেছেন। তাঁরা সবাই এই বাংলাদেশেরই লোক। সত্যি কথা বলতে এইসব দেখে আস্তে আস্তে নিজেকে সুধরানো শুরু করলাম। শুধু ভ্রমণে না অন্যান্য অনেক বিষয়েই নিজেকে সুধরানোর চেষ্টা করলাম। এখনো প্রতি নিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের আনাচে, কানাচে প্রচুর এমন মানুষ আছে। যাঁদের হয়তো আমরা চিনিও না।
এখন প্রশ্ন হইল তাহলে আমি ভ্রমণ করি কেন? সেখানে কি কোন ধান্দা নাই? অবশ্যই ধান্দা আছে। আমার ভ্রমণের প্রথম উদ্দেশ্য হইল মানুষ। মানুষ আমার খুবই পছন্দ। প্রকৃতি দেখা অথবা প্রকৃতির কাছে যাওয়া হয়তো একটা বিষয় আছে কিন্তু সেটা আমার দ্বিতীয় পছন্দ বা আগ্রহ, আমার প্রধান আগ্রহ মানুষ। আমি প্রতিদিন প্রতি নিয়ত অবাক হয়ে মানুষ দেখি, মানুষকে উপলব্ধি করতে চাই। শেষ বিচারে মানুষ হইতে চাই।
২২ ভাদ্র ১৪২৫