
ছোট বেলায় প্রচুর ক্রিকেট খেলতাম। স্কুল পালিয়ে অনেক খেলা খেলেছি, এতটাই পাগল ছিলাম ক্রিকেটের জন্য। ক্রিকেটের জন্য কত যে মাইর খেতে হয়েছে মার কাছে তার হিসাব নেই। ঘরে অনেক খেলোয়ারদের স্টিকার-পোস্টার থাকতো। আমাদের নাখালপাড়ায় মাঠ ছিলো না, খেলতে হতো শাহীনবাগে যেয়ে। সেখানে যেই দলে খেলতাম সেই দলের নাম ছিলো ‘টাইগার ক্রিকেট ক্লাব’। সেই ক্লাবের হয়ে ৩য় শ্রেণির ও ২য় শ্রেণির দলের বিপক্ষেও খেলা হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় সেই দিনগুলি অতীত। কিন্তু সুযোগ পেলেই ক্রিকেট খেলা এখনো দেখি। অফিসে যাওয়ার পর পত্রিকায় প্রথমেই যে পাতাটি আগে খুলি সেটা হলো খেলার পাতা। আজকে সকালে উঠে যখন খবরটি দেখলাম মেজাজটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেলো।
২০১১ সালের নভেম্বর মাস ‘কেওক্রাডং বাংলাদেশ’ গ্র“পের সঙ্গে সাইকেল ভ্রমণে গেলাম শ্রীলঙ্কায়। সাইক্লিংয়ের দ্বিতীয় দিনে মাতারা শহর পার হয়ে এক যায়গায় সবাই ক্লান্ত বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। পাশেই একটি দোকান, দোকানে ডাব দেখে ডাব খেতে ইচ্ছা করলো। সবাইকে বলাতে সবারই সম্মতি পাওয়া গেল। খাওয়ার সঙ্গে আরাম করে বিশ্রাম নেওয়া যাবে। দোকানে গেলাম ডাব কিনতে গেলাম। দোকানি এক মহিলা, তিনি আবার ইংরেজি বা হিন্দি জানেন না। অনেক্ষন তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম আমরা ডাব কিনতে চাই। কোন ভাবেই বোঝাতে পারলাম না। কিছুক্ষন উনিও কি যেন আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন কিন্তু আমিও কিছু বুঝলাম না। তারপর আমাকে হাতের ইশারায় অপেক্ষা করতে বলে দোকান থেকে বের হয়ে গেলেন, কিছুক্ষন পর এক ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসলেন। ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল মহিলা তার মা হন। তিনি আমার কোন কথাই বোঝেননি তাই তাকে ডেকে এনেছেন। ছেলের সঙ্গে কথা বলে সবার জন্য ডাব কিনলাম।
আমরা ডাব খাচ্ছিলাম এমন সময় ছেলে নিজেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আপনারা কোন দেশ থেকে এসেছেন? আপনারা কি ইন্ডিয়ান?’
‘না আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি।’
‘ও, সাইকেল ট্যুর করার জন্য?’
‘হ্যা, আপনি কি বাংলাদেশ চেনেন?’
‘হ্যা, চিনি। আপনাদের দেশের ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান আমার প্রিয় খেলোয়ার।’
‘ও, তাই নাকি! কিন্তু এখন তো সাকিব ক্যাপ্টেন নেই। এখন তো ক্যাপ্টেন মুশফিক।’
‘মুশফিক? এই ছেলেটা কে?’
‘ও আমাদের দলের উইকেট কিপার।’
‘ও আচ্ছা, ওর খেলা তেমন ভালো করে দেখিনি।’
‘আপনি বাংলাদেশের আর কোন কোন খেলোয়ারকে চেনেন?’
‘আমি তামিম ইকবালকে চিনি আর আশরাফুলের খেলা খুব ভালো লাগে।’
‘ও তাই! আশরাফুলের খেলাও আপনার ভালো লাগে?’
‘হ্যা, ও তো অনেক অল্প বয়সে শ্রীলঙ্কার সাথে এক টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিল তখন দেখেছি। তবে তখন আমি আরো ছোট ছিলাম।’
যখন সে এই সব কথা হচ্ছিল তখন বুকটা গর্বে ভরে উঠছিল। আমাদের দেশে অনেক সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু ক্রিকেটের জন্য আমরা অনেকের কাছেই পরিচিত। অনেক দেশই হয়তো বাংলাদেশকে চেনে এই ক্রিকেটের জন্য। এই শ্রীলঙ্কাতে এসেও আমাদের দেশের সাকিব-তামিম-আশরাফুলের ভক্ত পেয়েছি।
ক্রিকেট নিয়ে যে কলঙ্ক লেগেছে, তা আমাদের জন্য সত্যি দুর্ভাগ্য। যেখানে কোটি কোটি মানুষের হাসি কান্না জড়িয়ে আছে এই ক্রিকেটে।
বার বার শুধু একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরছে, তোদের কাছে টাকাটা এত বড়?