সাইকেলের কারণে অগণিত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। অনেকের সঙ্গে পথেঘাটে অনেকের সঙ্গে ফেসবুকে। সাইক্লিংয়ের কারণেই রাহাত নামে দুই জন বিশেষ মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। একজন টিওবি পিতা জামান রাহাত খান। তাঁর সাথে পরিচয় ২০০৮ সালে, এই রাহাত ভাইয়ের কথা আরেকদিন বলা যাবে। যেহেতু বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপে এই লেখা দিচ্ছি তাই আরেকজনের কথাই এখানে বলি।
মাইনুল ইসলাম রাহাত ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমেই। ফেসবুক দুই দিন আগে জানাইল ঠিক ৯ বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে। বিডিসির জন্মের আগের বছর বলা যায়। তখন রাহাত ভাই গোলগাল টাইপের ছিলেন। এই গোল আকার থেকে আরেকটু স্মার্ট হওয়ার জন্য প্রতিদিন বিকালে সাইকেল চালাতেন। সেই সাইক্লিংয়ের প্রতি ভালবাসা থেকেই সম্ভবত অনলাইনে সার্চ দিয়েছিলেন কারা কারা নিয়মিত সাইকেল চালায় দেখার জন্য। এটা অবশ্য রাহাত ভাই-ই আমার চাইতে ভাল বলতে পারবেন। তিনিই সম্ভবত একদিন কথায় কথায় এই কথাটা বলেছিলেন। সার্চ দিয়ে মনে হয় কোথাও খুঁজে পেয়েছিলেন আমায়।
ফেসবুকে জয়েন করার পরে একদিন ম্যাসেজের মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার দেয়ানেয়া হয়েছিল। একদিন বিকালে সাইক্লিং করতে করতে আমার অফিসে হাজির। তখন আমি লালমাটিয়ায় এ ব্লকের ৫/২ নাম্বার বাসার সেন্টার ফর এশিয়ান আর্ট অ্যান্ড কালাচারে কাজ করি। সাধারণত বিকালেই বসতাম সেখানে। সেখানেই রাহাত ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা। প্রথমদিন এসেছিলেন একটা নীল টি-শার্ট আর সম্ভবত থ্রি কোয়ার্টার টাইপের একটা ট্রাউজার পরে। পায়ে ছিল বাটা অথবা অন্য কোন কোম্পানীর হকি সু। সেই দিন প্রায় ঘণ্টা দেড়েক কথাবার্তা হয়েছিল। প্রথমে এসে আমার সাইকেলটা দেখে বলেছিলেন, ‘এইটা দিয়েই বাংলাদেশ ঘুরেছেন?’ সেই থেকেই শুরু।
তখন আমি এক সঙ্গে তিনটা জায়গায় কাজ করতাম। এর মধ্যে একটা ছিল সেইফ নামে একটা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে মেরিনড্রাইভে একটা সাইক্লিং প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। ঐটাতে যাওয়ার জন্য চিন্তা ভাবনা করেছিলেন। কিন্তু একদিনে ১০০ কিলোমিটার পারবেন কিনা এটা নিয়া অনেক চিন্তায় ছিলেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়েছি যে এটা কোন ব্যাপারই না চলেন, আমি নিজেও অনেক আস্তে আস্তে চালাই। কিন্তু তখন আর তিনি সাহস করেন নাই। কিন্তু সেই ভয় কাটাতে রাহাত ভাইয়ের বেশিদিন লাগে নাই। এই সেইফেই পরবর্তীতে রাহাত ভাইয়ের সঙ্গে সহকর্মী হিসাবেও বেশ কিছুদিন কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল।
এর পরে আমরা অনেক অসাধারণ কিছু ট্রিপ দিয়েছি। বরিশাল থেকে মোড়লগঞ্জ হয়ে মংলা, পরের দফায় মংলা থেকে সাতক্ষীরা, পুরাটাই সুন্দরবন ধরে। বান্দরবান থেকে পিক৬৯, প্ল্যান ছিল থানচি পর্যন্ত কিন্তু একটা এক্সিডেন্টের জন্য পুরাটা শেষ করা হয় নাই। রেমা-কালেঙ্গা সাইক্লিং, এই রুটটা এখন বেশ পপুলার হয়ে গেছে। এই রুট বের করতে গিয়ে অনেক মজা হয়েছিল। এই ট্রিপেই সম্ভবত ফুয়াদ ভাইয়ের বয়স ২৮ হইছিল এর পরে আর বয়স বাড়ে নাই। এই অসাধারণ ট্রিপগুলা সম্ভবত আর হবে না। হয়তো অন্য আরো অনেক ট্রিপ দেয়া হবে কিন্তু সেই আনন্দগুলা আর পাওয়া যাবে না।
২২ কার্তিক ১৪২৬
ছবি: ফুয়াদ আহসান চৌধুরী