তখন রেসিডেন্টসিয়ালে পড়ি। কোন ক্লাস মনে নাই। ক্লাস এইটই হবে। কি এসে যায় কোন ক্লাসে পড়তাম তা দিয়ে , ঘটনার উপর তার বড় কোন প্রভাব নেই। তার চেয়ে বাজার আর রান্না ঘর ম্যনেজ যে বড় শিল্প তার প্রভাব আছে এতে।
কিছু কিছু সময় অর্থনৈতিক টানাটানি গেলেও বাবা-মা কোনদিন তা বুঝতে দিতে চান নি। বরংচ তাদের ক্ষমতায় যতটুকু কুলাত টার থেকে বেশী উনারা আমাদের দেয়ার চেষ্টা করত। তাতে খারাপ যেটা হয়েছে তা হল আমরা দুই ভাই আপনাদের মত স্মার্ট হয়ে উঠতে পারি নি ।
যখন কার ঘটনা তখন আমরা লালমাটিয়া ডি ব্লকে থাকি। স্কুল থেকে হেটে বাসায় আসি। দৈনিক হাত খরচ ২০ টাকা। সকাল বেলা যথারীতি দেরি হওয়ায় রিক্সা নিতে হয়। যার ফলে হাতে ৮ থেকে ১০ টাকা থাকে। তা দিয়ে টিফিন খাওয়া বা কোনদিন দৈনিক ভাতা না পেলে রিক্সা ভারা ম্যনেজ করতে চলে যেত।
তো এই অবস্থায় মা একদিন চিন্তা করলেন আমাকে আস্তে আস্তে সাবলম্বিন করবেন। আমাকে বললেন কিছু সবজি কিনে আনতে । ফিরার সময় রাস্তায় টাউন হল বাজার পরত। তো আমি আমার বাজারে ঢুকতেই এক সবজীর দোকান। কোন দিন বাজার করি নাই। এইদিক ঐদিন টাকিয়ে সবচেয়ে সুন্দর সবজীটার দাম জিজ্ঞাস করলাম । দরদাম কেমন করেছিলাম মনে নেই। শুধু এখনো মনে আছে দোকানদার কে জিজ্ঞাস করেছিলাম ভাল হবেতো। দোকানদার সম্ভবত তার চিরচেনা উত্তর দিয়েছিল। সুতরাং বাজার বগল দাবা করে বাসায় আসে আম্মাকে দিলাম।
রুমে ঢুকব এমন সময় আম্মার ডাক। রান্না ঘরে আম্মার কাছে গেলে আম্মা কাজ করতে করতে খুব সিরিয়াস ভাবে বললেন , “তোমাকে একটু ধামরাই যেতে হবে”। আমিতো অবাক। ধামরাই আমার খালা বাড়ি। দুই একবার একলা একলা গিয়েছি, তারপরও একলা কোথায় যাওয়া অনেক বড় রোমাঞ্চকর কাজ। ধাম্রাই ছুটির দিনে দুই বেলা ক্রিকেট খেলা হয় অ্যার সেজ দাদু (খালাত ভাইয়ের দাদু আর আমার নিজের দাদু-নানু এর সেজ বোন) ধামরাই গেলে ফিরার সময় হাতে কিছু ধরিয়ে দেয়। সুতরাং ধামরাই যাওয়া মানে রথ দেখা , কলা বেচা আর সংগে অনেক কিছু। সুতরাং আমিতো আনন্দে আটখানা , কিন্তু আম্মার দিকে টাকিয়ে বুঝে গেলাম কিছু সমস্যা আছে। দেখি আম্মা মিটিমিটি হাসতেছেন। ঘটনা কি?
আমি শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞাস করলাম কেন আম্মা, ধামরাই যেতে হবে কেন। প্রশ্ন করেও মনে একটা আশা ছিল হয়তবা কোণ কাজ আছে। আম্মার উত্তর শুনেও বুঝলাম না কিছুই। আমি একটা বাধা কপি কিনে আনছিলাম বাজার থেকে। আম্মা বলল বাধা কপিটা নাকি ধামরাই পৌছায় দিতে হবে। বাধাকপি কেন ঢাম্রাই পোছাব ? বুঝলাম না কিছুই ? বাধা কপি কি ধামরাই পাওয়া যায় না ? নাকি সেজ দাদুদের বাসায় কেউ বাধা কপি খাইতে চাইছে? নাকি বাধা কপি অনেক দামি আর ভাল সবজি। এই সময় পাওয়া যায় না তাই আম্মা শেয়ার করতে চাইছে। খুবই কনফিউসিং ব্যপার ।
আমার কনফিউসিং চেহারা দেখে আম্মা এবার হেসে দিলেন আর মূল কাহিনী এবার আমি বুঝতে পারলাম। আমি যে সময় বাধা কপি কিনেছিলাম সেই সময় পারত মানুষ জন বাধা কপি খেত না বরংচ তা গরুর খাবার হিসেবে ব্যভার করা হত। তাই আম্মা মজা করে গরুকে খাওয়ানোর জন্য ধামরাই যেতে বলতেছিল ।
যাই হোক এই ঘটনার একটা ভাল দিক আছে, বাধাকপির পিছনে খরচের কারণে তারপর থেকে আম্মা অনেক দিন আমাকে বাজারে পাঠায়নি । আর কোন বিরক্তিকর কাজ থেকে বাচার টেকনিকও এই ঘটনা থেকে শিখেছিলাম।
পুনশ্চঃ ছবি সুত্র – ইন্টারনেট (https://bit.ly/2XOKkFy)