অনেকদিন পরে হঠাৎ একটা বিষয় মনে পড়লো। এই রকম প্রায়ই হয়, হুট করে এটা সেটা সামনে চলে আসে। মনে হয় পুরানো কিছু বিষয় সিনেমার পর্দার সামনে দিয়ে চলতেছে…
আমি তখন বিশেষ প্রমোশনে নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে। তারপরেও পড়ালেখা বাদ দিয়া পুরাপুরি কাজে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। এখানে সেখানে কাজ খুঁজতেছি। তখন তো অনলাইন ছিল না, তাই চাকরি-বাকরি খুঁজার মাধ্যম ছিল তিনটা বলা যায়। একটা পত্রিকা, একটা পরিচিত লোকজন আরেকটা হইল রাস্তায় রাস্তায় বিশেষ বিশেষ বিজ্ঞাপন।
চাকরির খোঁজখবর করতেছি তারমধ্যে আবার কোন কাজ-কর্ম জানি না। আর ঐ শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়া যে ভাল কিছু পাব না সেটার বাস্তবতাও জানতাম না। এই পথে নেমেছি মাত্র, কিন্তু স্বপ্ন দেখি অনেক বড় কিছু একটা কাজ পেয়ে যাব।
এর মধ্যে একবার রাস্তার দেয়ালে বিজ্ঞাপন দেখে ফার্মগেট গেলাম একটা অফিসে। বিজ্ঞাপনটা একদম কমন, অষ্টম শ্রেণি থেকে শুরু করে অনার্স মাস্টার্স সবার চাকরি আছে তাদের কাছে। এই কমন প্রতারণা বুঝতে আমার তখন ভালই সময় লাগছিল। অফিসে যাওয়ার পরে বললো সিভি নিয়া আসেন, কম্পিউটার দোকান থেকে ৫০ টাকা খরচ করে সিভি বানিয়ে নিয়ে গেলাম। তারপর বলে ৩৫০ টাকা দেন, আপনার চাকরি কনফার্ম। কিন্তু সেই সময় ঐ টাকাটা ছিল না। এলাকায় ফিরে এক বড় ভাইকে বললাম, ‘ভাই কিছু টাকা দেন, টাকাটা হলে চাকরিটা হয়ে যাবে।’ ঐ বড় ভাই আমাকে আর টাকা দেন নাই সব শুনে। বললেন ওরা ধান্দাবাজ। এদের কাছে যাইস না।
আমি তখন ভাবছিলাম ভাই টাকা দিবে না তাই এইসব উল্টাপাল্টা কথা বলছে। উনার কথা শুনে গা জ্বলতেছিল। মনে হচ্ছিল ইশ্ যদি আমার কাছে টাকা থাকতো তাহলে টাকাটা দিয়ে অফিসে কাজ শুরু করে ভাইরে মুখের উপর দুইটা কথা শুনিয়ে দিতাম।
কিন্তু সেই কথা আর কোনদিনই তাঁকে শোনানোর সৌভাগ্য হয় নাই। কারণ ঐ বড় ভাই-ই ঠিক ছিলেন আমি ভুল ছিলাম। কিন্তু এই বিষয় বুঝতে আরো সময় লাগছে আমার। তবে আমি কখনো ধরা খাই নাই। এটা আমার ভাগ্য বলতে হবে।
এই প্রতারকদের মূল ঘাটি ছিল বেশ কয়েকটা জায়গায়। বিশেষ করে বিশেষ বিশেষ পয়েন্টে। ফার্মগেট, পল্টন, মতিঝিল, মহাখালী এইসব জায়গায়। এদের অফিস ঠিকই থাকতো দুই-তিন মাস পরপর তাদের অফিসের নাম পালটে যেত। আর পালটে যেত ঐ অফিসের লোকজন। দুই তিন মাসে টাকা পয়সা কামিয়ে চম্পট দিত।
এই বিষয়টা এখন আর দেয়ালে নাই, মানে কমে গেছে বলা যায়। এখন বিষয়টা চলে আসছে অনলাইনে। অনলাইনে বিভিন্ন রকম চটকদার বিজ্ঞাপন। আবেদন করলেই সেখান থেকে ম্যাসেজ আসবে আপনাকে সিলেক্ট করা হয়েছে। আপনে অমুক জায়গায় আসবেন আপনাকে ১৫ দিন অথবা এক মাসের একটা ট্রেনিং করতে হবে। ট্রেনিং পার্পাস আবার কিছু টাকাও দিতে হবে। আর ঐ অফিসের ঠিকানা বেশিরভাগ সময়ই পাওয়া যায় গাজীপুরের দিকের। যেন সব রসুনের গোড়াটা এক জায়গায়।
তারপরে আবার আছে ফ্রিল্যান্স কোর্স। এমনভাবে বলে, যেন কোর্স করার পরপরই আউটসোর্সিং শুরু করে দিতে পারবে। তারপর সেই আউটসোর্সিং দিয়া টাকাও না শত শত ডলার কামাতে পারবে এমন একটা অবস্থা। আর এইসব হাবিজাবির পিছনে শত শত মানুষ জীবনের অনেক মূল্যবান সময় শেষ করে ফেলতেছে। তার হিশাব করলে শেষ করা যাবে না। আর এইসব মানুষকে কিছু বুঝানোও কঠিন, এতে হিতে বিপরীত হয়। শত্রু ভাবা শুরু করে, আমি যেমন সেই বড় ভাইকে ভাবছিলাম।
আমি যতটুকু বুঝি পৃথিবীতে কোন ভাল কিছুতেই শর্টকাট বলে কিছু নাই। একটা বিষয়ের উপর ধৈর্য্য, পরিশ্রম আর সময় না দিলে একই চক্রাকারে ঘুরতেই থাকতে হয়। একটা ছেড়ে আরেকটাতেই যাওয়া হবে। কোনটাতেই কিছু হয় না। নিজেরও কোন আত্মতৃপ্তি আসে না। শুরু হয় ডিপ্রেশন…