প্রথম দিন: ১ মার্চ (ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জ)
নাখাল পাড়ার বাসা থেকে বের হলাম বিকাল ৫:৩০ মিনিটে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ঘুরার উদ্দেশ্যে। সারাদিন জিনিপত্র গোছানো, শেষ সময়ে কয়েকজনের কাছ থেকে নেয়ার কারণে বের হতে হতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। ভরসা একটাই, রুট প্লেন অনুযায়ী যেতে হবে নারায়নগঞ্জ। যদিও নারায়নগঞ্জ শহরে না।
বাসা থেকে বের হয়েই সরাসরি চলে গেলাম চারুকলার সামনে। চারুকলার সামনে ভ্রমণ বাংলাদেশে অঘোষিত অফিস। সেখানে পৌঁছেই মনা ভাইয়ের কাছ থেকে হাতে নিলাম নতুন কেনা সনি সাইভার শট ক্যামেরাটা। অনেক কাজের ঝামেলায় থাকার জন্য মনা ভাইয়ের দায়িত্ব ছিলো ক্যামেরা কেনার জন্য।
আমাকে বিদায় জানানোর জন্য সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন ভ্রমণ বাংলাদেশের কামরুল ভাই, মুজাক্কের ভাই এবং রুমা আপা। নতুন কেনা ক্যামেরায় কয়েকটা ছবি তুলে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম নারায়নগঞ্জের উদ্দেশ্যে।
রওনা দিতে আকাশ প্রায় অন্ধকার। প্রথম দিনের যাত্রাটা আসলে চলছিল রাতে। তবে খুব একটা সমস্যা হচ্ছিল না। কারণ সব জায়গাতেই বেশ ভালই আলো ছিল। সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ির জ্যাম ও ব্যাস্তনগরী ঢাকাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম নারায়নগঞ্জ জেলার মদনপুর উপজেলার দিকে। সেখানেই আমার থাকা-খাওয়া ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন মুহম্মদ জিয়াউর রহমান। জিয়া ভাই প্রধানত কাজ করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম-এর একান্ত সচিব হিসেবে।
আমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে নানাখী পল্লী বিদ্যুতের অফিসে। শুধু আমার না, সঙ্গে আরো দুইজনের থাকা-খাওয়া ব্যবস্থাও। আমার সঙ্গে প্রথম রাত কাটানো কথা মনা ভাই ও আবু বক্কর ভাইয়ের। সেখানে পৌঁছানোর পর সেখানকার কর্তব্যরত দারোয়ান ভালো ভাবেই আমাকে গ্রহণ করলেন। উনি আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। এভাবেই শেষ হলো আমার প্রথম জেলা থেকে দ্বিতীয় জেলায় প্রবেশ।
পৌছানোর কিছুক্ষণ পর সেখানকার দুইজন কর্মকর্তা আসলেন তারা তাদের নিজের পরিচয় দিচ্ছেন জিএম, এজিএম বলে। কিছুক্ষণ কথা বলার পরে বুঝলাম এখানকার লোকজন নিজেদের পরিচয় এভাবেই দিয়ে থাকেন। প্রথম দিনেই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা, যাঁরা নিজেদের নামের চাইতে নিজেদের পদবীটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেল, খাবার সময় হয়ে গেল। কিন্তু মনা ভাই অথবা আবু বক্কর ভাইয়ের কারোরিই আশার নাম নেই। শেষ মুহূর্তে ফোনে জানতে পারলাম তাঁরা কেউই আসছেন না। আসবে পরদিন সকালে। অথচ তাঁদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। কিছুটা মন খারাপ হলো তাঁদের জন্য, ভেবেছিলাম ভ্রমণের প্রথম রাতটা সবাই একসঙ্গেই কাটাবো, কিন্তু তা আর হলো না।
প্রথম রাতের খাওয়া শেষ করলাম বড় সাইজের রুই মাছ, মুরগীর মাংস, সবজি আর ডাল দিয়ে। খাওয়ার পর টুটু ভাই, রুমা আপার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে আমার ভ্রমণের প্রথম রাত্রিযাপনের জন্য ঘুমোবার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। আমার থাকার ব্যবস্থা করা হলো অফিসের দ্বিতীয় তলায়। সেখানে বিশাল রুমের মধ্যে দুইটি খাট পাতা সঙ্গে মশারি টানিয়ে আমার জন্য খাট দুটি প্রস্তুত করে রেখেছেন কেয়ারটেকার। আজকের রাতটা ভালই কাটবে বোঝা গেল। পরবর্তী রাত কিভাবে কাটবে সেই চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
[…] ৬৪ জেলায় যা দেখেছি-১ […]