৬৪ জেলায় যা দেখেছি–২৭

২৭ মার্চ (সিরাজগঞ্জ থেকে পাবনা)

সকালে একই রাস্তা ধরে রওনা দিলাম। হাটিকুমরুল হয়ে বনপাড়া। পথে খুব একটা দেরি করি নাই। কারণ গতকাল একই রাস্তা ধরে গিয়েছিলাম। বনপাড়ার আগে শুধু একবার থেমেছিলাম তাও হালকা খাওয়াদাওয়ার জন্য। বনপাড়া পর্যন্ত কাউকে জিজ্ঞেসও করতে হয় নাই কিভাবে যেতে হবে।

বনপাড়া পার হওয়ার পর লোকজনদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম কিভাবে পাবনা যেতে হবে। লোকজনদের কথামত ডুমুরিয়া দাশুরিয়া হয়ে পাবনা শহরে পৌঁছালাম। শহরে পৌঁছে ফোন দিলাম সিরাজী ভাইকে। এখানেও কোরেশী ভাই থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। সিরাজী ভাই ফোনে জানালেন তিনি একটা কাজে ব্যস্ত ফিরবেন সন্ধ্যার পরে। তাই আমাকে বিকল্প চিন্তা করতে হলো।

ঢাকায় থাকতেই আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতাম সেখানেই পরিচয় হয়েছিল অঙ্কন নামে একজনের সঙ্গে। উনাকে ফোন দিলাম উনিই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন আরেক জায়গায়। অঙ্কন ভাই যাঁর নাম্বার দিলেন তাঁর নাম মুরাদ। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি প্রায় পাঁচটার মতো বাজে। মুরাদ ভাই বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে কোথায় যেতে হবে। সুবিধার জন্য তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সামনে যেতে বললেন।

এডওয়ার্ড কলেজের গেইটেই মুরাদ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। কথা বলে জানতে পারলাম তিনি এডওয়ার্ড কলেজেরই ছাত্র। উনি একটি বাড়িতে কয়েকজন ছাত্র মিলে ম্যাস করে থাকেন। ম্যাসে পৌঁছে খাওয়া শেষ করে হালকা একটা ঘুম দিলাম।

ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে, বাইরে বের হলাম ঘুরতে দুইজনে মিলে। একটি হোটেলে ঢুকলাম হালকা নাস্তা খাওয়ার জন্য। নাস্তা খাওয়া শেষ করে প্রথমে গেলাম পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ঘোরাফেরা করার জন্য। বেশ পুরনো এবং বড় একটি কলেজ, অনেক জায়গা জুড়ে কলেজটি তৈরি হয়েছে। জন্ম একশ বছরেরও বেশি।

কলেজে ঘুরা শেষ হওয়ার পর গেলাম শহর দেখতে। এই শহরে একটি নিউমার্কেট আছে। শহর ঘুরাতে ঘুরাতেই তিনি জানালেন এখানে স্কয়ারের একটি বড় কারখানা। আর বেশিরভাগ পন্য এখানেই তৈরি হয়। বেশ বড় এলাকা জুড়ে কারখানাটি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে মুরাদ ভাই ডেসটেনি নিয়ে কিছু বয়ান দিলেন। আমার ভ্রমণের সঙ্গে একমাত্র ডেসটেনির কাজটাই ভাল যায়। তাঁর কথা শুনে বেশ হাসি পেল যদিও তাঁর সামনে হাসি নাই। তবে চিন্তাও করি নাই এত দূরে এসেও ডেসটেনির প্রভাবে পড়তে হবে। ডেসটেনির কথা বলতে বলতেই তিনি পাবনা মেন্টাল হাসপাতালের কথা তুললেন।

আমি জানতাম পাবনা হেমায়েতপুরে হাসপাতালটি। কিন্তু সেটি যে কাছেই তা আমার আমার ধারণা ছিল না। আমার ধারণা ছিল অনেক দূরে হবে। মুরাদ ভাইয়ের কথাতে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। দেখলাম শহর থেকে অল্প দূরেই হেমায়েতপুর। সেখানে যখন পৌঁছাই তখন ঘড়িতে ৮ টার মত বাজে। চারিদিকে অন্ধকার শুনশান নিরবতা।

আমরা একটি রিক্সা নিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে ভিতর থেকে চিৎকার, এক মহিলা গলা। রিক্সাওয়ালা বললেন ভয় পাইয়েন না এটা মহিলা ওয়ার্ড। শব্দটি তিনতলা থেকে আসছে, সেদিকে তাকিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিতে হলো। কারণ এই দৃশ্যের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। যে মেয়েটি চিৎকার করছিলেন কাপড় খুব একটা গোছানো ছিল না।

11793042114_97513ff961_z
রিক্সা ওয়ালাকে বললাম তাড়াতাড়ি চলেন। মহিলা ওয়ার্ড শেষ করে চলে এলাম পাশে একটি আশ্রমে। আশ্রমের নাম, শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ পরমতীর্থ। ভেতরে ঢুকে দেখি বেশ বিশাল এক লাইব্রেরী। লাইব্রেরীতে অনেক বই সাজানো। এবং আলাদা করে রাখা হয়েছে বিজ্ঞান, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল রচনাবলীসহ অনেক বই। বেশ কিছু পত্রিকার আর্কাইভও চোখে পড়লো। সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম পাগলা গারদের পুরুষ ওয়ার্ডের কাছে। একটি রুমের পাশে দেখি তিনচারজন গান করছে। সবাই রুগি, কিন্তু গান শুনে বোঝার উপায় নেই তাঁরা মানসীক রুগি। গানের গলা থেকে শুরু করে সুর উচ্চারণ দুইটাই অসাধারণ। গেট দিয়ে ঢোকার সময় দাড়োয়ান বলে দিয়েছিলেন যেন কাছে না যাই। দাড়োয়ানের কাছে জানতে পারলাম দিনের গেলে তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা যেত। এখন সবাইকেই রুমে রাখা হয়েছে। কিন্তু দিনের বেলা বাইরে হতে দেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে রাত ১০ টার দিকে রুমে ফিরে আসলাম।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.