২৯ মার্চ (কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর)
ভোরে নাস্তা করে আমিনুর ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার পথে নামলাম। মীরপুর পার হওয়ার পর একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো। তিনি সাইকেলে করে দোকানে দোকানে বিভিন্ন জিনিশপত্র বিক্রি করেন। আমাকে দেখে উনি আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন। তার চোখমুখে যেন আনন্দ বের হয়ে আসছিল পাশাপাশি একটা দুখি ভাবও।
তাঁর অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল সাইকেল ভ্রমণে বের হবেন, দেশ দেখবেন। কিন্তু পারিবারিক দায়িত্বের কারণে কোন কিছু হয়ে উঠেতে পারে নাই। আমাকে দেখে তাঁর সেই স্বপ্নের কথা আবার মনে পড়ে গেল। তাই তিনি এতটা আবেগাপ্লুত হয়ে গেছেন। তিনি আমাকে জোর করে দুইটি চিপস কিনে দিলেন। আমাকে দেখে তাঁর খুব ভাল লেগেছে, তাঁর মনে হচ্ছিল আমাকে দিয়ে তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
পথে যখন ক্লান্ত থাকতাম তখন এই মানুষগুলার কথা মনে পড়তো। এই মানুষগুলার ভালবাসা, স্বপ্ন সবই আমাকে আলাদা শক্তি দিত। নাম না জানা সেই ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমলা নামক একটি জায়গা পার হলাম। পথে দুই মটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গেও কথা হলো, সেটা চলতে চলতেই। তাঁরাও আমাকে চা-নাস্তা খাওয়ানোর জন্য উদগ্রিব। কিন্তু আমার সময় কম। কারণ মেহেরপুর হয়ে আমি মুজিবনগর যেতে চাই। মেহেরপুর থেকে মুজিবন নগর আরো দূরে। আমি যেহেতু মেহেরপুর থাকবো তাই মুজিবনগর দেখে আবার মেহেরপুরে ফিরে আসতে হবে।
খলিশাকুণ্ড নামক একটি সেতু পার হয়ে এক সময় মেহেরপুর পৌঁছালাম। একটি হোটেল খুঁজে বের করলাম। পুরা ভ্রমণে এই একটি হোটেল যেখানে আমার ব্যাগ থেকে শুরু করে সব কিছু চেক করলো। হোটেলের ম্যানেজার জানালেন এখানকার নাকি এইটাই নিয়ম। উপর থেকে এই নির্দেশনাই দেয়া আছে।
হোটেলে ব্যাগ রেখে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হয়ে গেলাম মুজিবনগরের উদ্দেশে। রাস্তার অবস্থা মোটামুটি ভালই ছিল তবে কিছু জায়গায় ভাঙ্গাচুরাও ছিল। মুজিবনগরের স্থাপনা তৈরির জন্য কাজ চলছিল। সেখানে পৌঁছেই একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল টিভিতে দেখা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের সরকার গঠনের সেই ভিডিওটি চোখে ভেসে আসছিল।
বিশাল একটি বাংলাদেশের ম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে ১৯৭১ সালের ঘটনাটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন রকম স্থাপনার মাধ্যমে। পুরা কাজটা শেষ হলে আবার এসে দেখে যাব ঠিক করে ফেললাম। দূরদুরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন দেখতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানেই ঘুরাফেরা করলাম, ছবি তুললাম।
মেহেরপুর শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। রাতের অন্ধাকেরই কিছুক্ষণ শহরটা ঘুরলাম। এই পর্যন্ত যতগুলা জেলাশহর ঘুরেছি, সবজেলার চাইতে এই জেলাশহরটা কেন জানি অনেক ছোট মনে হল। অন্য জেলার কথা চিন্তার করলেও এই জেলাটা ছোটই বলা চলে।