ভ্রমণ শুধু সুন্দর হোটেলে থাকলাম, খাইলাম, ঘুরলাম, চিল করলাম বিষয়টা এমন না। এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। ভ্রমণে অজানাকে জানতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে অনেক কিছু। নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন জায়গা এক্সপ্লোর করতে হবে। টিওবির উদ্দেশ্যেও আসলে ঐটাই। নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করা, আর এক্সপ্লোর করার মতো আনন্দ আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। যে কিনা এইসব বিষয়গুলার মধ্যে ঢুকে যেতে পারবে, আমার ধারণা সে অন্য এক দুনিয়ার সন্ধান পেয়ে যাবে।
৬/৭ একটা ট্রিপে হাওরে গিয়েছিলাম। মোহনগঞ্জের তেথুলিয়া বাজার থেকে নৌকায় করে ইটনা হয়ে কিশোরগঞ্জে শেষ হয়েছিল সেই ভ্রমণ। সেই ট্রিপে আমাদের ভ্রমণসঙ্গী ফরিদী নুমান ভাইয়ের সাথে নানান বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছিল। নুমান ভাই আবার চারুকলার ছাত্র ছিলেন অনেক আগে, বয়সে আমার চাইতে কম করে হলেও ১৫ বছরের বড় হবেন। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং ঘুরাঘুরির অভিজ্ঞতা অসাধারণ। খুবই ভাল ছবি তুলেন, বিশেষ করে প্রকৃতি এবং পাখির ছবি তুলতে বেশি পছন্দ করেন। সেদিন নুমান ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথম জানতে পেরেছিলাম বিখ্যাত ‘মধু হই হই’ গানটা সেন্ট মার্টিনের আবদুল রশিদ নামের এক জনের। তিনি এই শিল্পীর সেই বিখ্যাত গানটি ২০০৭ সালে তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন।
হাওরের ভ্রমণ থেকে ফিরে এসে নুমান ভাইয়ের ইউটিওবে চ্যানেলে গানটি দেখেছিলাম, আর অবাক হয়ে শুনছিলাম। কত কিছু যে আমাদের অজানা থাকে, আর এই গান গেয়ে কত মানুষ বিখ্যাত হয়ে গেল অথচ সেন্ট মার্টিনের সেই আবদুর রশিদকে তেমন কেউ চেনেই না। এখন হয়তো আস্তে আস্তে অনেকের নজরে আসছে অথবা আসবে।
এই গানের একটা মজার ইতিহাসও আছে। শিল্পী আবদুর রশিদ তখনও শিল্পী হয়ে উঠেন নাই। তাঁর সাথে একজনের প্রেম হয় নাম ছিল মিনারা। মিনারার সাথে প্রায় ১৩/১৪ বছরের প্রেম ছিল আবদুর রশিদের। তারপর ভুল বুঝাবুঝির মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এবং মিনারা টেকনাফে অন্য কোন একজনের সাথে ঘর বাঁধেন।
সেই দুঃখেই সম্ভবত পরে আবদুর রশিদ একটা যন্ত্র হাতে তুলে নেন। নিজে নিজে বাজাতে বাজাতে সঙ্গীতের মধ্যে ঢুকে যান। তারপর একদিন এই ‘মধু হই হই’ বিখ্যাত গানটি লিখে ফেলেন। আর গানটি তিনি মিনারাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেন। আর এই গান এখন মোটামুটি গণমানুষের হয়ে উঠেছে। তাঁর আরো অনেক গান আছে, ইউটিওবে খুঁজলে পাওয়া যাবে। আর আস্তে আস্তে সাধারণ আবদুর রশীদ শিল্পী আব্দুর রশীদ হয়ে উঠেন।
২৪ শ্রাবণ ১৪২৭